ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। অতি তাৎপর্যপূর্ণ এ মাসটি প্রতি বছর আমাদের মাঝে ঘুরে ফিরে আসে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বাংলাভাষী মানুষ সহ অন্য ভাষাভাষী মানুষের কাছেও দিবসটি ব্যপক ভাবে সমাদৃত। প্রতি বছর আমরা ঘটা করে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন করে থাকি। উদযাপিত হরেক কিসিমের আনুষ্ঠানিকতায় থাকে বাঙ্গালীয়ানার ব্যপক সমারোহ। যেমন ভাষা সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়ে বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। কবিতা পাঠ, ভাষার গান। ভাষার মাসের তাৎপর্য ব্যখ্যা করে বিভিন্ন সভা সেমিনার। বক্তৃতা বিবৃতি। সে সবের সব কিছুতে বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি ব্যপক শ্রদ্ধা জ্ঞপন করা হয়। চারিদিকে বাংলা আর বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রচার প্রচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা দেশ। ভাবখানা এই অনেক হয়েছে আর নয় আজ থেকে আমরা সবাই বাঙ্গালী হয়ে গেলাম। এখন থেকে আমরা আমাদের বাঙ্গালী কৃষ্টি সংস্কৃতিকে আমাদের পথ ও পাথেয় হিসেবে ধারণ করে নিলাম। কিন্তু এ সবই নিছক বাতুলাতা মাত্র। অর্থাৎ যেই লাউ সেই কদু। পর দিন থেকেই আমরা আবার স্ব-রুপে আত্বপ্রকাশ করি। চারিদিকে সুধু বিজাতীয় সংস্কৃতির আস্পালন। চলনে-বলনে বিজাতী। কথায় বার্তায় বিজাতী। শিক্ষা, সংস্কৃতিতে কে কত বেশি ইংরেজি আওরাতে পারি তা নিয়ে চলে ব্যপক প্রতিযোগিতা। হালে আবার অনেকে হিন্দি কপচাতে পারদর্শী হয়ে নিজেদের বড্ডো সুশীল ভাবতে ভালোবাসেন। চারিদিকে শুধু সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা। দেশের নাম শুধু বাংলাদেশ হলেও কর্মকাণ্ডে চলনে- বলনে আচার আচরণে আমরা সবাই সংকর জাতি। এই যদি হবে অবস্থা তবে এতো ভং কেন? রং ঢং কেন? তবে কেন ভাষা আন্দোলন? কেন তবে রফিক সফিক বরকত জবাব সহ আরো অগনিত মানুষের রক্ত দেয়া? তবেকি জাতি হিসেবে আমরা আমাদের আত্মপরিচয় ভুলতে বসেছি? অথচ ভাষা আন্দোলন কতই না গর্বের বিষয় আমাদের। অথচ বলুনতো পৃথিবীতে আর এমন কটা জাতি আছে যারা মাতৃভাষার জন্য অকাতরে নিজেদের জিবন বিলিয়ে দিয়েছে? ১৭৫৭ সালে আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারিয়ে ছিলাম পলাশীর আম্রকাননে। অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে একত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলন। অতপর রক্তের মহা সমুদ্র পেরিয়ে আজকের সার্বভৌম বাংলাদেশ। ভাষা আর স্বাধীনতা দুটোই আমাদের রক্ষা কবচ। তাই ভাষা হারালে স্বাধীনতাও টিকবে না।
"মধুর চেয়ে আছে মধুর
সে আমার এই দেশের মাটি,
আমার দেশের পথের ধূলা
খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি।"