• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

করিম উল্লাহ মার্কেটে দোকান কিনে ‘প্রতারণা’র শিকার প্রবাসী

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
করিম উল্লাহ মার্কেটে দোকান কিনে ‘প্রতারণা’র শিকার প্রবাসী

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারস্থ করিম উল্লাহ মার্কেটে একটি দোকানকোঠা কিনে মালিকপক্ষের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মো. আমিরুল ইসলাম নজমুল নামের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের গোপশহর গ্রামের মরহুম মো. তহুর আলীর ছেলে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।  লিখিত বক্তব্যে আমিরুল ইসলাম নজমুল জানান- করিম উল্লাহ মার্কেটের মালিক শাহপরাণ থানাধীন খরাদিপাড়ার আনন্দ-৩৮ নং বাসার বাসিন্দা মো. আমান উল্লাহর ছেলে ছানা উল্লাহ ফাহিম ও তার চাচাতো ভাই- মো. শাহজাহান উল্লাহর ছেলে আতাউল্লাহ সাকের প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের দোকান দখল করে রেখেছেন।  তিনি বলেন- ২০০১ সালে করিম উল্লাহ মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হলে দ্বিতীয় তলায় ১০৪.৫২ স্কয়ার ফিটের ৩৪ নং দোকানকোঠা ক্রয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০০৩ সালে কাজ সম্পন্ন হলে মূল চুক্তিপত্র সম্পাদন করে দোকানটি বুঝে নেন। নির্মাণকালীন তিন বছরে তিনি দোকানকোঠার মূল্য বাবদ তিন ধাপে মালিকপক্ষকে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। প্রথমে আমিরুল মালিকপক্ষের মনোনীত একজনকে ভাড়া দেন এবং নিয়মিত জামিদারি ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁর দোকানকোঠার প্রতি লুলোপ দৃষ্টি পড়ে মালিকপক্ষের। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ‘রক্ষণাবেক্ষণ’ বাবদ আমিরুলের কাছে জমিদারি ভাড়া ছাড়াও মাসিক আরও বাড়তি ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি এতে সম্মত না হওয়ায় তারা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এরই মাঝে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমিরুল তার দোকানের পূর্ববর্তী ভাড়াটিয়াকে বের করে ১ অক্টোবর দিলদার হোসেন নামে নতুন ভাড়াটিয়াকে দোকান বুঝিয়ে দেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মালিকপক্ষ। কারণ- তারা তাদের মনোনীত ভাড়াটেকে দোকান ভাড়া দিতে চেয়েছিলো। ফলে ওই বছরের ৫ অক্টোবর আমিরুলের ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে ‘জমিদারি ভাড়া বকেয়া’ মিথ্যা অজুহাত দিয়ে ছানাউল্লাহ ফাহিম দোকানটিতে তালা মেরে দেন। দখলের পর ছানাউল্লাহ ফাহিমের সঙ্গে দেখা করে নিয়মিত জমিদারির ভাড়া পরিশোধের রশিদ প্রদর্শন করেন আমিরুল। ওই সময় ছানাউল্লাহ ফাহিম ও তার সহযোগিলা আমিরুলকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করলে তিনি প্রাণভয়ে লন্ডন ফিরে যান। লন্ডনে গিয়ে মার্কেটের আরেক মালিক আতাউল্লাহ সাকেরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টির সমাধান চান আমিরুল। কিন্তু সাকের সমাধান না দিয়ে উল্টো উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাড়াটিয়া দিলদার হোসেনের প্রতি ‘অবৈধ মোবাইল ফোন বেচা-কেনা’র অভিযোগ তুলে দোকানে তালা মারা হয়েছে বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে মালিকপক্ষ নতুন ভাড়াটিয়াকে দোকান দিয়ে ফের সেই দিলদারকেই কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন।  সংবাদ সম্মেলনে আমিরুল আরও জানান- দোকান বেদখল হওয়ার পর ফিরে পেতে তৎক্ষালীন যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের হাইকমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেন। হাইকমিশনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তৎক্ষালীন সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, প্রবাসী সেল প্রধান, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেন। এভাবে চারবার যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে চিঠি আসলেও তদন্তকাজ এগুয়নি।  আমিরুলের অভিযোগ- তদন্ত শুরু হলেই এখানের সকল প্রশাসন ও দপ্তরকে ছানাউল্লাহ ফাহিম ও আতাউল্লাহ সাকের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে ফেলেন। ফলে বার বার বাধাগ্রস্থ হয়েছে প্রশাসনিক তদন্তকাজ ও তৎপরতা।  পরবর্তীতে দোকানকোঠাটি ফিরে পেতে বার বার ছানাউল্লাহ ফাহিম, আতাউল্লাহ সাকের, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের তৎক্ষালীন নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-এমনকি সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছে ধর্ণা দিয়েও সমাধান পাননি আমিরুল। একর্যায়ে আমিরুলকে সেই দোকানের মায়া ত্যাগ করে ১৫ লাখ টানা নিয়ে লন্ডন ফিরে যেতে মালিকরা প্রস্তাব দেন। কিন্তু সে প্রস্তাবে রাজি আমিরুল রাজি হননি। পরে ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরলে ছানাউল্লাহ ফাহিম ও আতাউল্লাহ সাকেরের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে তারা দেশে একটি সংবাদ সম্মেলন করে অনেক মিথ্যা তথ্য তুলে ধরেন।   ‘সুবিচার’ পেতে ছানাউল্লাহ ফাহিম ও আতাউল্লাহ সাকেরের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রে আদালতে প্রতারণা মামলা এবং ২০২৩ সালের ৪ জুন সিলেট জেলা যুগ্ম জজ ২য় আদালতে স্বত্ব মামলা দায়ের করেন বলে জানান আমিরুল। মামলা দুটি আদালতে বিচারাধীন।  বেদখল হওয়ার পর থেকে দোকানের ভাড়া থেকে বঞ্চিত এবং গত সাড়ে ৩ বছর ধরে এ বিষয়ে নানাভাবে টাকা ব্যয় হওয়ায় দোকানকোঠার মূল্য ছাড়াও তাঁর অন্তত ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আমিরুল ইসলাম নজমুল।   প্রেস বিজ্ঞপ্তি