রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’। এমন প্রচলিত কথার সাথে বিএনপির অতীত কর্মকান্ডের অনেক মিল থাকায় অাজকের এই লেখার অবতারণা। সম্প্রতি বিএনপি নেতা রিজভী অাহমদ নিজের ব্যবহৃত চাঁদর ছুড়ে ফেলে ভারতীয় পণ্য বর্জন অান্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। গত ২১ মার্চ বুধবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে তিনি গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিতেই সঙ্গে থাকা কর্মীরা সেই চাদরে আগুন ধরিয়ে দেন। রিজভীর ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক সত্যিই অাশাব্যঞ্জক।অবশ্য এটি তার অারো অনেক অাগেই করা উচিৎ ছিল। তথাপিও তার এই বিলম্বিত উপলব্ধি কে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। ভারত যতবার অামাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে বিএনপি তার কোনটিরই প্রতিবাদ করেনি। সীমান্ত হত্যায় ভারত যখন উন্মত্ত ছিলো বিএনপি তখন মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল। অামাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় ভারতের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট সহ সকল স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড বিএনপি নীরবে মেনে নিয়েছে। মুলধারার রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি নিরোর ভুমিকায় এতদিন সে কাজটি করে গেছে। যে লক্ষ্যে শহীদ জিয়া জাতীয়তাবাদি রাজনীতির সুচনা করেন এক সময় বিএনপি সে অাদর্শ থেকে যোজন যোজন দুরে সরে গিয়েছিল। দেরিতে হলেও বিএনপি হয়তো তাদের সে ভুল বুঝতে পেরেছে। ভারত কোন কালেই অামাদের বন্ধু ছিলো না। বন্ধুত্বের অারালে শোষণ করাই ছিলো তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। অামাদেরকে ভাতে ও পানিতে মারার সকল চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছে ভারত। ভাতে মাছে বাঙালির যে চিরন্তন পরিচয় অামদের,তার টুটি চেপে ধরেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। অভিন্ন নদী চুক্তির তোয়াক্কা না করেই একের পর এক বাধ দিয়ে সব কয়টি নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিনত করার চেষ্টা করছে তারা।অথচ অামরা তার কোন প্রতিবাদই করছি না।অামরা কি অমাদের পানির নায্য অধিকার ফিরে পাবনা? অামাদের অনেকে একটা কথা প্রায়ই বলে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারত অামাদের সহায়তা না করলে অামরা স্বাধীন হতে পারতাম না।তাই যদি সত্যি হতো তবে কেন নয় মাসে অামাদের তিরিশ লক্ষ্য মানুষকে জীবন দিতে হলো? তিন লাখ মা বোনকে সতীত্ব বিসর্জন দিতে হলো? ভারত যা করেছে তা তাদের নিজেদের সার্থেই করেছে। যারা এসব কথা বলছেন তাদের সবার উদ্দেশ্যে সবিনয়ে একটি কথা বলতে চাই, দয়া করে সিরাজ সিকদারের লেখা “অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা” বইটি একবার পড়ে দেখবেন। সীমান্ত হত্যা ভারতের জন্য একটি অতিসাধারণ নিয়মিত ঘটনা। বাংলাদেশের ফেলানীর গুলিবিদ্ধ লাশ সীমান্তের কাটাতারে ঝুলে থাকার ছবি বিশ্ববিবেককে নাড়া দিলেও সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়নি। সীমান্ত হত্যা নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ৯ বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে ২৪৫ জন বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা ঘটলেও একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। এই বিচারহীনতাই সীমান্ত হত্যাকে উস্কে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৫-২৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে আসকের হিসাবে ২৪৫ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৪৬ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ২৪ জন, ২০১৮ সালে ১৪ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জন, ২০২০ সালে ৪৯ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন এবং ২০২৩ সালে ৩০ জন। আর সর্বশেষ চলতি বছরে প্রথম সীমান্ত হত্যার শিকার হলেন বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীরই একজন সদস্য। এমনকি বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসেই চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে ৭ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০০৯-২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ১০ বছরে ২৯৪ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছিলেন। এসব বিষয়ে বিএনপি তখন কি ভুমিকা নিয়ে ছিল সেটাই প্রশ্ন এখন। ভারত যার বন্ধু হয় তার অার শত্রুর প্রয়োজন হয় না। নেপাল,মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা যার সাম্প্রতিক উদাহরণ। দেরিতে হলেও তারা যা করতে পেরেছে অামরা তা পারব কখন? অার যদি তা না করতে পারি তবে হয়তো অামাদেরও সিকিম, জুনাগড়, কাশ্মীর, অথবা হায়দরাবাদের ভাগ্য মেনে নিতে হবে।মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে তা রক্ষা করা অনেক কঠিন। মহান স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে বিষয়টি অামাদের গভীর ভাবে ভেবে দেখতে হবে। অতএব সাধু সাবধান।