সিলেটের সাদা পাথর পরিচিত পর্যটন স্পট। দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে এ স্পটটি বিশেষভাবে পরিচিত। একটু প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে ছুটি পেলেই সবাই ছুটেন সাদা পাথরে। সাদা পাথরের সমারোহ বেশি। এ কারণে সবাই এর নাম দিয়েছেন সাদা পাথর। কিন্তু সাদা পাথরের পাথর কমতে শুরু করেছে। এতে করে এলাকা শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। প্রতি রাতেই লুট হচ্ছে সাদা পাথর। একটি চক্র পুলিশকে ম্যানেজ করে লুটে নিচ্ছে পাথর। স্থানীয়দের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত ২২ দিনে সাদা পাথর থেকে ১৫ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে।
আর এর নেপথ্যে রয়েছে এরশাদ নামের এক ব্যক্তি। তার নেতৃত্বেই সাদা পাথরে লুটপাট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন- ২১শে মে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনের পর থেকে উজান থেকে আসতে থাকে ঢল। এতে করে সাদা পাথর এলাকায় পর্যটন যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায়। প্রবল ঢল এলে সাদা পাথর পর্যটন স্পটের দোকানপাটের সব মালামাল ভেসে যায়। এরপর পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পর্যটকদের জন্য সাদা পাথর এলাকা বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে-উজানের ঢলের এই সুযোগে পাথর লুটপাট চক্রের সদস্যরা সাদা পাথর লুটের মহোৎসব শুরু করে। স্থানীয় কলাবাড়ি গ্রামের শাহাবুদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন-২১শে মে থেকে সাদা পাথর এলাকা থেকে প্রতিদিন একশ’ থেকে দেড়শ’ নৌকা পাথর লুট করা হয়। রংপুর বস্তির এরশাদ আহমদের নেতৃত্বে এ পাথর লুটপাট করা হয়। প্রতি নৌকা থেকে এরশাদ থানা পুলিশের নাম করে ১ হাজার টাকা আদায় করে। আর মাহিন উল্লাহ নামের একই এলাকার এক ব্যক্তি গোয়েন্দা পুলিশের নামে আরও তিনশ’ টাকা আদায় করে। মাত্র ১৩শ’ টাকা দিয়ে পাথর লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেটরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন-প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর এলাকা, দয়ারাবাজার, কলাবাড়ি, কালিবাড়ি এলাকা থেকে শত শত নৌকা সাদাপাথর যায়। মাটির উপর অংশে থাকা বড় বড় পাথর হাত দিয়ে সংগ্রহ করে নৌকা ভর্তি করে নিয়ে যায়। এসব পাথর ভোলাগঞ্জ, দয়ারবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাম্পিং করা হয়। পরে নৌকা ও গাড়িযোগে এসব পাথর ধোপাগুল এলাকায় বিক্রি করা হয়। অবাধে পাথর লুটের ঘটনার খবর পেয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ সাদা পাথর এলাকায় অভিযান চালিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি কয়েকটি পাথর বোঝাই নৌকা ডুবিয়ে দেন। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাথরখেকো চক্রের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় পাথরখেকো চক্রের প্রধান এরশাদকে। গতকাল বিকালে মানবজমিনকে এরশাদ জানিয়েছেন; তিনি আগে জড়িত ছিলেন। সাদা পাথর এলাকায় যেতেন। কিন্তু ইউএনও’র নেতৃত্বে অভিযানের পর থেকে আর যান না। এখন সবকিছু বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন জানিয়েছেন- ইউএনও’র অভিযানের পরদিন থেকে এরশাদের নেতৃত্বেই পাথর লুট চলছে। এর প্রমাণ মিলেছে ওসি গোলাম দস্তগীরের অভিযানে। গত রোববার রাতে ওসি ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাথরবোঝাই করা ১৭টি নৌকা আটক করেন। ওসির অভিযানের পর থেকে সন্ধ্যারাতে নয়, মধ্যরাতের পর থেকে পাথর লুট করা হয় বলে জানান তারা। পাথর লুটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্থানীয়রা জানিয়েছেন- প্রতি রাতে গড়ে ১শ’ নৌকা পাথর লুটপাট হলে ২২ দিনে ১৫ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। প্রতি নৌকা পাথরের মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এই পাথর লুট বড় কথা নয়, পর্যটকরা এসে এখন বিরান ভূমি পাবেন। যা সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের জন্য দুর্নাম। এ ছাড়া সরকার এই পাথর থেকে কোনো রাজস্বও পায়নি।
প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা এ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে গেছে সবার পকেটেই। পুলিশ জানিয়েছে- গত রোববার রাতে পাথর চুরির সময় ধলাই নদের হেকিমের টুক এলাকা থেকে পাথরবোঝাই ছয়টি নৌকাসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৮-১০টি বারকি নৌকায় ৩০-৩৫ জন সাদা পাথর নিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টার সময় ছয়টি নৌকার ১৭ জনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়; চুরি করা সাদা পাথর বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী বিজিবি ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে সাদা পাথর চুরি করছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- বিজিবি ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র। এগুলো চুরি রোধে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছি। দিনরাত টহল দিচ্ছি। গত রোববার রাতে ছয়টি নৌকাসহ ১৭ জনকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ জানিয়েছেন- প্রশাসনের কারও বিরুদ্ধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্র: মানবজমিন