• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট বিভাগজুড়ে বন্যায় মানুষ গুলো আতঙ্কর মাজে আছেন

admin
প্রকাশিত জুন ২১, ২০২৪
সিলেট বিভাগজুড়ে বন্যায় মানুষ গুলো আতঙ্কর মাজে আছেন

রয়েছে। যার কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারতেছে না।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটে বৃষ্টিপাত কম হওয়া ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টির ওপর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি নির্ভর করছে। পাহাড়ি ঢল নামার ফলে নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বুধবার রাতে কোনো বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়নি। সিলেটে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
সুনামগঞ্জঃ
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ১৮ জুন মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীপাড়ের বাড়িগুলো থেকে পানি নামতে থাকলেও বাড়ছে হাওরের পানি। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে হাওর এলাকায়। দুর্ভোগ-দুর্দশায় ও হতাশায় দিন কাটছে সুনামগঞ্জবাসীর। গত তিন দিনে জেলার অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর পাড় থেকে পানি কিছু কমলেও এখন শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, হাজিপাড়া, নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছন নগর, মল্লিকপুর, নবীনগর ও কালীপুর এলাকায় কোথাও কোমর থেকে হাঁটুসমান পানি রয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌরশহরের নতুনপাড়া এলাকার দোলন দাস (৪০) খবরের কাগজকে বলেন, গত তিন ধরে নতুনপাড়ায় শত শত মানুষ পানিবন্দি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কাজ না করতে পারায় অনেকের ঘরে খাবারও নেই। কেউ এসে দেখেও না মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে। একই এলাকার মিঠুন জানান, কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমরসমান পানি। আতঙ্ক কাটছেই না। বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি আরও বাড়বে। পানিতে থেকে মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ শহরতলি ইসলামপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন জানান, ঈদের আগে থেকে এলাকায় পানি ঢুকেছে। চারদিন ধরে বন্যার পানির নিচে তলিয়ে আছি, কেউ দেখে না। ঘর থেকে বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে খাবার নাই, ওষুধ নাই। আমাদের অসহায়ত্ব দেখার কেউ নাই। আমাদের ত্রাণ লাগবে, খাবার লাগবে। যদি পারেন খাবার দেন। আমাদের সন্তানদের খাবার প্রয়োজন। এদিকে এখনো সুনামগঞ্জের সঙ্গে ছাতক, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৫৪১ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসি মানুষ। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়নগুলোতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ২৪ ঘণ্টায় পানি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
মৌলভীবাজারঃ
বড়লেখা হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২ গ্রাম বন্যা কবলিত। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। এতে প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, রাজনগরে প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দুদিকে বহমান মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। দুটি নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ন এলাকা। উপজেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন যাবৎ প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দুদিকে বহমান মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে উপজেলার ফতেহপুর, টেংরা, উত্তরভাগ, কামারচাক ও রাজনগর সদর ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মনু ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্লাবিত এলাকা গুলো হচ্ছে- ফতেহপুর ইউনিয়নের জাহিদপুর, চরকারপাড়, আব্দুল্লাহপুর, রশিদপুর, কাশিমপুর, সোনালুয়া, শাহপুর, বেড়কুড়ি, লামা বিলবাড়ি, সাদাপুর, তুলাপুর, উত্তরভাগ ইউনিয়নের ছিক্কাগ্রাম, কামালপুর, নয়াটিলা, আমনপুর, সুরিখাল, জুগিকোনা, কেশরপাড়া, সোনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, রুস্তমপুর, রাজনগর সদর ইউনিয়নের নন্দীউড়া, ভ‚জবল, কামারচাক ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর, হাটি করাইয়া, তেঘরি, টেংরা ইউনিয়নের রাউবাড়ি। প্লাবিত এসব এলাকায় খাবার পানি, গোখাদ্য সহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন কষ্টকরে নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেও মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে বন্যার আশংকায় রয়েছেন অসহায় লোকজন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে উভয় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ তা প্রতিরোধে যথা সময়ে ব্যবস্থা নেয়না। ফলে নদী তীরবর্তী মানুষজন বর্ষা মৌসুমে চরম আশংকায় দিনাতিপাত করেন এবং সঠিক সময়ে ভাঙ্গন রোদ না কয়ায় অনেকের বাড়িঘর নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়্।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল দাশ(৭০) জানান, এলাকার লোকজন নিয়ে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোপূর্বে নিজে উদ্যোগ নিয়ে দুটি ভাঙ্গন মেরামত করেছি। এরপরও শুধু ফতেহপুর ইউনিয়নে প্রায় ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ মূলক কাজ চলমান রয়েছে। আপাতত বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে উভয় নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন মেরামত করা হয়েছে এবং নদী তীরবর্তী এলাকার ইউপি সদস্যদের নিকট ভাঙ্গন প্রতিরোধক জিও ও সিনথেটিক বেগ হস্তান্তর করা হয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে সব ধরণের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে, গত ক’দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জের খরস্রোতা ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বুধবার সকালে নদীর পানি বিপদ সীমার ৩৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট লিখার সময় ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বুধবার সকালে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেগ ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের খুশালপুরে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে বড়চেগ, নারায়ণপুর, চৈতন্যগঞ্জ, বাদে উবাহাটা, খুশালপুর, ছয়কুট সহ প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বানের পানি ও পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের ছয়কুট এলাকা এবং আদমপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি-আধকানী সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী। এদিকে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধলাই নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ড্রেন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে পৌর এলাকার ২টি ওয়ার্ডের পানিশালা, কমলগঞ্জ, ৩ নং ওয়ার্ডের নসরতপুর, খুশালপুর আংশিক ও ৫নং ওয়ার্ডের চÐীপুর গ্রামের ২৫ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ড্রেন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় কমলগঞ্জ ডাক বাংলো, কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। উজানের এ পানি নিম্নাঞ্চলে গিয়ে শমসেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলী মাঠ, ভেসে গেছে পুকুর ও ফিসারির লাখ লাখ টাকার মাছ। মৌলভীবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, ধলাই নদীর পানি বুধবার বিকালে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের ত্রাণ মজুত রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছি।
এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বুধবার কুশিয়ারা নদী (ফেঞ্চুগঞ্জ) এর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৪৫ মিটারে অবস্থান করছিলো। যা বিপদসীমা থেকে ১মিটার (৩ফিট) বেশি। এর কারনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নতুন নতুন এলাকায় আক্রমণ করছে। বন্যার আক্রমণের শিকার এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নই। এর মধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চল, নদীপার এলাকা ও হাকালুকি হাওর ঘেষা এলাকার অবস্থা বেশি অবনতি। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের মধ্য বাজার ও পুর্ববাজার ডুবে আছে দুদিন ধরে। হাসপাতাল রোড ও আশপাশের কয়েকটি সরকারি দপ্তর, ফার্মেসি, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, জনস্বাস্থ্য উপ প্রকৌশলী অফিস ইত্যাদিও তলিয়ে গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ থানারোড থেকে পুর্ব বাজার হয়ে ১নং ইউনিয়নের অনেকগুলো গ্রাম বন্যা আক্রান্ত। একই ভাবে আক্রান্ত মাইজগাও, উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ও উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের অনেক এলাকা। কারো বাড়িঘরে কারো রাস্তায় পানি। মানুষ ছাড়াও বিপাকে পড়েছে গবাদি পশুরা। অন্যদিকে উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের মল্লিকপুর হাজী করম উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক টপকে কুশিয়ারা নদীর পানি হুহু করে ঢুকছে মল্লিকপুর হাওরে। যে কারনে এই পানির কারনে মল্লিকপুর থেকে ইলাশপুর ভায়া সড়কটি তলিয়ে যাবার আশংকা বেড়েছে। এই সড়কটি তলিয়ে গেলে সিলেটের সাথে বিস্তৃত অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমরা ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলেছিলাম এখন লোকজন অন্য আরেকটায় উঠায় মোট আশ্রয় কেন্দ্র হয়েছে ৩৯টি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যগন, বাজার বনিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ সম্মিলিত ভাবে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার সহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছে জিআর এর চাল পাঠানো হয়েছে। তারা প্রয়োজন দেখে বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করবেন।
হবিগঞ্জঃ
সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টির ফলে হবিগঞ্জে বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে। অব্যাহতভাবে বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। এরই মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিছু স্থানে বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি বৃদ্ধি পেলে কুশিয়ারা নদীঘেঁষা বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে পানি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর, আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক ডুবে দ্রæতগতিতে পানি প্রবেশ করছে কসবা গ্রাম, কসবা বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে। দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর, ফাদুল্লাহ, দুর্গাপুর, মথুরাপুর, হোসেনপুর, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর, পারকুল, উমরপুর, দীঘর ব্রাহ্মণগ্রাম, বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের সোনাপুর, চরগাঁওসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বড় ভাকৈর (পূর্ব), ইনাতগঞ্জের উমরপুর, মোস্তফাপুর, দক্ষিণগ্রাম, পাঠানহাটি, মনসুরপুর, দরবেশপুর, দিঘীরপাড়, নোয়াগাঁও, চন্ডিপুর, প্রজা, লামলীপাড়, আউশকান্দির বনগাঁও, পারকুল গ্রাম পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি দ্রæত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বন্যা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ। দিশেহারা অসহায় মানুষজন ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়- ইনাতগঞ্জের মোস্তফাপুর পাঠানহাটি গ্রামের পাকা সড়ক, দীঘলবাক গ্রামের পাকা সড়কসহ ১৫-২০টি পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ইনাতগঞ্জ অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ও পারকুলে অবস্থিত কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র হতে ২-৩ হাত নিচে বর্তমানে পানি রয়েছে। তবে দ্রæত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসক্ষেত্রে পানি প্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাশ অনুপ বলেন, বন্যা আক্রান্ত হয়ে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন। ইতোমধ্যে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, আমরা সবসময় মানুষের পাশে আছি।
এদিকে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বর্ষণের ফলে খোয়াই ও সুতাং নদীর পানি বেড়ে চুনারুঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার ১৯জুন সহ গত দুইদিনের বর্ষণের কারণে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আকস্মিক বন্যায় বেশকিছু ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গাজীপুর, আহম্মদাবাদ, মিরাশি, রানীগাঁও, সাটিয়াজুরী ও শানখলা ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামে পানি ঢুকেছে। এ অবস্থায় গ্রামগুলোর মানুষ মারাত্মক কষ্ট দুর্ভোগ পড়ছেন। বুধবার দুপুরে খোয়াই নদীর চুনারুঘাট ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া করাঙ্গী ও সুতাং নদীর পানিও হু হু করে বাড়ছে। এসব নদীর বাঁধ উপচে নদী এলাকায় জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। চুনারুঘাটে প্রায় ১০হাজার হেক্টর ধান্য জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, “ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বর্ষণ হওয়ার কারণে চুনারুঘাট এলাকায় খোয়াই নদীতে পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির পরিমাণ আশঙ্কাজনক। বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে নালুয়া চা বাগান, সাটিয়াজুরী ও রানীগাঁও ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। ফসলি জমিসহ পুকুর তলিয়ে গেছে। করাঙ্গী নদীর দু’পাড় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কুনাউড়া, কৃষ্ণপুর, চিলামি, দৌলতপুর ও দারাগাঁওসহ ৭/৮ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ।
শানখলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, তাঁর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে ও সুতাং নদীর পানি উপচে ৭/৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সাটিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দালুর রহমান জানান, করাঙ্গী নদীর দুপাড়ে ১০/১২ টি গ্রাম সম্পুর্ণ প্লাবিত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পলাশ জানান, তার ইউনিয়নের ৫/৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা আক্তার জানান, বন্যার আশঙ্কা নেই, তিনি বেশ কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। ভাঙ্গন এলাকা সার্বক্ষনিক খবর রাখতে ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।