মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : প্রতি বছর রমজান মাসে বেশি চাহিদা থাকে তেল, চিনি, ছোলা, আদা, ডাল, আলু খেজুর প্রভৃতি পণ্যের। রমজান মাস শুরুর বাকি এখনো প্রায় দুই মাস। অথচ এরই মধ্যে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্য নিত্যপণ্যের দামেও ঊর্ধ্বগতি। উদ্বেগ বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানির দাম, ডলার ও এলসি সংকটে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের উপায় নেই।
বাজার পরিস্থিতি যাই হোক, এবারও রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মহল। কিন্তু রমজান শুরুর আগেই দ্রব্যমূল্যের আগাম ঊর্ধ্বগতির কারণে এমন আশ্বাসে ভরসা নেই জনগণের। তারা বলছেন, বিগত কয়েক বছরের মতো এ রমজানেও অসাধু ব্যবসায়ী চক্র পুরোনো ছকে চলছে। রমজাননির্ভর পণ্যের দাম তারা আগেই বাড়াতে শুরু করেছে, যাতে রমজানে নতুন করে বাড়ানোর প্রয়োজন না পড়ে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বৈশ্বিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকটে এলসি খোলায় সমস্যার কারণে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। বাধ্য হয়ে তারা পণ্যমূল্য সমন্বয় করছেন। অস্বাভাবিকভাবে কোনো পণ্যের মূল্য বাড়ছে না।
উপজেলার ভিন্ন এলাকার অনেকেই হিসাব করে সংসার চালান। (৩১ জানুয়ারি) তাহারা রমজানের কিছু পণ্য আগাম কিনে রাখার জন্য বাজারে গিয়েছিলেন, যাতে সে সময় সংসারে বাড়তি চাপ না পড়েন। তিনি দৈনিক জাগ্রত দেশকে বলেন, প্রতি রমজানে পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হয়। সেজন্য এবার গত বছরের অর্জিত কিছু টাকা দিয়ে বাজার সেরে রাখতে চেয়েছিলাম। এসে দেখি রোজার জন্য আমার যা যা প্রয়োজন, সবকিছুর দাম বেশি।
তিনি বলেন, তেল, চিনি, আদা, রসুন, ছোলা, ডাল, খেজুরসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। বেসনের দামও বেশি। কিন্তু রোজার জন্য প্রয়োজন নয়, এমন পণ্যের দাম কিন্তু বাড়ছে না। তাহলে এটাকে সিন্ডিকেট ছাড়া কী বলা যায়? প্রতি বছর একই ছক এঁকে ভোক্তার পকেট কাটা হচ্ছে।
রমজানের পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিক্রেতারাও। জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী দৈনিক জাগ্রত দেশকে বলেন, মুদিপণ্য যেগুলো রমজানে বেশি লাগে, সবকিছুর দামই এখন বেশি। শুধু তাই নয়, চিনি, তেলের মতো পণ্যগুলোর সরবরাহ সংকটের কথাও শোনা যাচ্ছে ইদানীং। ওই সময় পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটা জানা নেই। তবে বাজার স্থিতিশীল থাকবে না সেটা নিশ্চিত।
রমজানে খেজুরসহ বেশকিছু ফলের চাহিদাও বাড়ে। উপজেলাসহ ভবের বাজার, কলকলিয়া, মোহাম্মদগঞ্জ বাজারে ফল বিক্রেতারা বলেন, খেজুরের দাম আরও দুই মাস আগে থেকে বাড়ছে। পাইকারি বাজারে অনেকে মজুত রাখছে। ছাড়ছে না। সে কারণে খুচরায় আগের তুলনায় প্রতি কেজি খেজুর মানভেদে ২০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তেল-চিনির দাম আগে বেড়েছে, এখন বাড়ছে ছোলা-ডালের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে তেল, চিনির দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে চিনির দাম আরেক দফা কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনির দাম (খোলা) পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ এবং পরিশোধিত চিনির (প্যাকেটজাত) দাম চার টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। যদ
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এখন চিনির দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আর সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ। পাম তেলের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে এখন মসুর ডালের দাম ১৭ শতাংশ ও ছোলার দাম ১৩ শতাংশ বেশি।
এছাড়া এসময় পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও গত বছরের একই সময়ে দেশে আদার দাম মানভেদে ৫০-১১০ শতাংশ, রসুনের দাম ৪৫-১২৭ শতাংশ এবং শুকনো মরিচের দাম ৭৫-১৫২ শতাংশ কম ছিল। খেজুরের দাম শতাংশে হিসাব না করে দেখালেও সংস্থাটি বলছে, কেজিতে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান দৈনিক জাগ্রত দেশকে বলেন, আমাদের কিছু আমদানির সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটা পুঁজি করে বাজারে তারচেয়েও বেশি অস্থিরতা তৈরির প্রচেষ্টা রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
‘কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ান। রমজান আসার এক-দুই মাস আগেই দাম বাড়িয়ে দেন। বর্তমান বাজারে সবকিছুই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই রমজান আসার আগেই এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে হবে। অযৌক্তিক মুনাফার লোভে সময়-সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে আসছে। সেগুলোর কঠিন মনিটরিং প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে কতটা সমস্যা হচ্ছে সেটাও সরকারের উচিত বাজার গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তদারকি করা। পাশাপাশি রমজান ঘিরে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। পণ্য কিনে মজুত করা ঠিক হবে না। সংযত হয়ে বাজারে পণ্য কিনতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিলেটের বার্তাকে বলেন, সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিয়মিত বাজার তদারকি এবং মনিটরিং করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সেটা সমাধানের জন্য করা হচ্ছে সুপারিশ।
তিনি বলেন, এ রমজানে খুচরা বাজারের পাশাপাশি মোকাম থেকে পাইকারি বাজার পর্যন্ত মনিটরিং করবো। অনিয়মের প্রমাণ মিললেই কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
যা বলছেন বড় ব্যবসায়ীরা রমজানে একটি পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় তেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুরের মতো পণ্যগুলো। যেগুলোর সবকটি পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। আমদানি করা পণ্যও খালাস করতে পারছেন না ডলারের অভাবে। এর মধ্যে দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তাই রমজানে ভোগ্যপণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।